We cannot solve problems with the same thinking we used when we created them.
Albert Einstein
থিংকিং নিয়ে আমি প্রায়ই সমস্যায় ভুগি। হয়তো আমি একটা বিষয় নিয়ে ওভার থিংক করছি অথবা একেবারেই চিন্তা না করে কোনো কাজ করে ফেলছি। ফলাফল, শুধুমাত্র খেয়াল কিংবা বেখেয়ালের বশে একটা ভুল/কস্টলি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।
আমার মতো আপনিও যদি এই সমস্যাতে পরে থাকেন তো এই লেখাটা আপনার জন্যই। পৃথিবীতে বহুল ব্যবহৃত “সিক্স থিংকিং হ্যাটস” সম্পর্কে এই লেখাটা পড়ে হয়তো ভবিষ্যতে আপনার চিন্তা ভাবনায় কিছু পরিবর্তন আসবে। আশা করছি লেখাটায় আপনি আমার মতোই উপকৃত হবেন।
সিক্স থিংকিং হ্যাটস কী?
“সিক্স থিংকিং হ্যাটস” এর উদ্ভাবক Dr Edward de Bono. তিনি ১৯৮৫ সালে Six Thinking Hats নামে বই লিখেন যেখানে তার এই থিংকিং এপ্রোচ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সহজ কথায় সিক্স থিংকিং হ্যাটস হচ্ছে একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটা সমস্যাকে নিয়ে চিন্তা করে সেটার জন্য সব চাইতে ভালো সমাধানটা বের করে আনার একটা পদ্ধতি।

সিক্স থিংকিং হ্যাটস সিস্টেমে আপনাকে ৬ টা নির্দিষ্ট রংয়ের “ইমাজিনারি” হ্যাট পরে একটা সমস্যাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। একেকটা রং একেকটা থিংকিং ওয়ে রিপ্রেজেন্ট করে। হ্যাট গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে একটু বলছি:
- ব্লু হ্যাট: ম্যানেজারিয়াল বা কো অর্ডিনেটর এর রোল প্লে করবে। বাকি সব হ্যাট যেন সমান সুযোগ পায় সেটা এনশিওর করাও ব্লু হ্যাটের কাজ।
- হোয়াইট হ্যাট: ইনফরমেশন আর ফ্যাক্টস নিয়ে রোল প্লে করবে।
- ব্ল্যাক হ্যাট: লিগ্যাল ইস্যু, চ্যালেঞ্জ, বাঁধা, ঝুঁকি আর কনসিকয়েন্স নিয়ে রোল প্লে করবে। এটাকে সবচাইতে পাওয়ারফুল হ্যাট হিসাবে ধরা হয়। এখানে যে ঝুঁকি, বাঁধা বা সমস্যা উঠে আসে সেগুলোকে ওভারকাম করাই মূল লক্ষ্য।
- রেড হ্যাট: সব ধরণের পজিটিভ এবং নেগেটিভ ইমোশন আর ফিলিংস নিয়ে রোল প্লে করবে। এছাড়াও ফোকাস করবে ভালোবাসা, ঘৃনা, ভয়, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদি এর উপরে।
- গ্রিন হ্যাট: ক্রিয়েটিভ থিংকিং নিয়ে রোল প্লে করবে। আরো ফোকাস করবে পসিবিলিটি, অলটারনেটিভ আর নতুন আইডিয়ার উপরে।
- ইয়েলো হ্যাট: অপটিমিস্টিক বা পজিটিভ থিংকিং নিয়ে রোল প্লে করবে। ফোকাস করবে ভ্যালু আর বেনিফিট এর উপরে।

সিক্স থিংকিং হ্যাটস কাদের জন্য?
“সিক্স থিংকিং হ্যাটস” সমস্যা সমাধানে এ বহুল প্রচলিত একটা পদ্ধতি। এটা বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে যেভাবে ইমপ্লিমেন্ট করা যায় তেমনি সদ্যজাত স্টার্টআপেও ইমপ্লিমেন্ট করা যায়। আর এটাকে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারি। তাই বলা যায় চাইলে যে কেউ “সিক্স থিংকিং হ্যাটস” এপ্রোচ ব্যবহার করে বেটার ডিসিশন নিতে বা প্রবলেম সলভিং করতে পারে।
সিক্স থিংকিং হ্যাটস কিভাবে ব্যবহার করা হয়?
একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আমাদের হাতে একটা প্রজেক্ট এসেছে কক্সবাজার সি বিচে একটা রিসোর্ট করার। আমাদের টিম জানতে চাচ্ছে এটা করা ঠিক হবে কিনা। প্রজেক্ট এর আইনগত বাধ্যবাধকতা, পজিটিভ আর নেগেটিভ দিক, অপরচুনিটি কস্ট ইত্যাদি নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই। এই ক্ষেত্রে যিনি ব্লু হ্যাট এর রোল প্লে করবেন তিনি পুরো প্রজেক্টটা নিয়ে গ্রুপে/টিমে কথা বলবেন। ডিসকাশন শুরুতে ব্লু হ্যাট প্রজেক্ট সম্পর্কিত বিস্তারিত ইনফরমেশন, আমাদের গোল, কে কোন রোল প্লে করছে ইত্যাদি এক্সপ্লেইন করে দিবেন। ডিসকাশন শেষে উনি সামারি করবেন আর ডিসিশন ফাইনালাইজ করবেন।
এরপরে হোয়াইট হ্যাট রোল যিনি প্লে করবেন তিনি পুরো টিমের সাথে তার হাতে থাকা সব ফ্যাক্টস আর ইনফরমেশন শেয়ার করবেন।
ব্ল্যাক হ্যাট রোল যিনি প্লে করবেন তিনি টিমের সাথে লিগ্যাল রিকোয়ারমেন্ট আর ইস্যু গুলো নিয়ে কথা বলবেন। প্রজেক্ট এর নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট, চ্যালেঞ্জ, রিস্ক বা কনসিকোয়েন্স কী হতে পারে সেটা নিয়েও আলোচনা করবেন।
রেড হ্যাট এর কাজ হবে ইমোশন আর ফিলিংস গুলো টিমের সাথে শেয়ার করা। সব ধরণের পজিটিভ বা নেগেটিভ ইমোশন যেমন: লাইক, ডিজলাইক, লাভ, হেইট, হোপ ইত্যাদি টিমের সাথে শেয়ার করা হবে।
গ্রিন হ্যাট এই ইস্যুতে ক্রিয়েটিভ রোল প্লে করবে। প্রবলেম বা চ্যালেঞ্জটাকে ক্রিয়েটিভলি ডিল করা বা নতুন আইডিয়া দেওয়া কিংবা নতুন এপ্রচ এ চিন্তা করা হবে এই ধাপে। আরো বেটার কোনো এপ্রোচ আছে কিনা বা আমরা কোনো অলটারনেটিভ ওভারলুক করেছি কিনা সেটা এইখানে দেখা হবে।
ইয়োলো হ্যাট রোল যিনি প্লে করবেন তার কাজ হচ্ছে অপটিমিস্টিক বা পজিটিভলি চিন্তা করা। আমাদের প্রজেক্টটার কারণে কি কি পজিটিভ ইম্প্যাক্ট আসতে পারে বা এই প্রজেক্ট এর বেনিফিট কী সেগুলো এই স্টেজে আলোচনায় আসবে।
এভাবে আমরা সিক্স থিংকিং হ্যাটস সিস্টেম ব্যবহার করে কোনো একটা ইস্যুর পজিটিভ, নেগেটিভ, লিগ্যাল অবলিগেশন, অপরচুনিটি, কন্সিকয়েন্স ইত্যাদি খুব দ্রুত আলোচনায় নিয়ে আসতে পারি যেটা পরবর্তীতে আমাদের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
সিক্স থিংকিং হ্যাটস এর সুবিধা কী?
সিক্স থিংকিং হ্যাটস এর সুবিধা হচ্ছে আপনি প্রায় সব ধরণের মতামত নিয়ে চিন্তা করছেন। সবার কনসার্ন গুলো উঠে আসার ফলে কারো মতামত বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। একই সাথে ডিসিশন নেওয়া সহজ ও দ্রুত হয়। তাই বলা যায় সিক্স থিংকিং হ্যাটস ব্যবহার করে আমরা:
- দ্রুততার সাথে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি
- সবার মতামত নিয়ে আলোচনা করে সিদ্বান্ত নিতে পারি
- একমুখী চিন্তা ভাবনার খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারি
- ডিসিশন মেকিং বায়াস অ্যাভয়েড করতে পারি
- প্যারালাল থিংকিং ক্যাপাসিটি বাড়াতে পারি
এছাড়াও আমরা সিক্স থিংকিং হ্যাটস ব্যবহার করে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারি।
সিক্স থিংকিং হ্যাটস এর আরেকটি সুবিধা হচ্ছে আপনি চাইলে নিজেই একে একে ছয়টা রোল প্লে করতে পারেন। আবার আপনি যদি বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের বা টিমের সদস্য হোন তো চাইলেই এক বা একাধিক মেম্বার মিলে একটা হ্যাটের রোল প্লে করতে পারেন। আর সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনার কাছে যদি এমন কোনো ইনফরমেশন থাকে যেটা ডিসিশন মেকিং এ ভূমিকা রাখতে পারে কিন্তু সেটা আপনার নির্ধারিত রোল এর বাইরে পরছে, তারপরেও আপনি সেই ইনফরমেশন টিমে শেয়ার করতে পারেন। কারণ এই পদ্ধতিতে সবার অপিনিয়ন আর ইনফরমেশন সমান গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়।
এই বিষয়ে আরো জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে নিচে কিছু রিসোর্স শেয়ার করে দিচ্ছি। এছাড়াও চাইলেই গুগল আর ইউটিউব সার্চ করে ডিটেইলস জানতে পারবেন। হ্যাপি থিংকিং… 👍
রিসোর্স
https://www.amazon.com/Six-Thinking-Hats-Bono-Edward/dp/0141033053
https://en.wikipedia.org/wiki/Edward_de_Bono
https://www.debonogroup.com/services/core-programs/six-thinking-hats/
ছবির সোর্সঃ উইকিপিডিয়া
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।